নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার কারণ কি?
প্রথম ১০ দিনের মধ্যে জন্ডিস
ফিজিওলজিকেল (স্বাভাবিক শরীর বৃত্তিয়), মায়ের আর বাচ্চার রক্তের গ্রুপে গরমিল থাকলে, শরীরে কোন ইনফেকশন হলে, অপুষ্ট অবস্থায় শিশু জন্ম নিলে, জন্ম থেকেই রক্ত ভেঙে যাওয়া রোগ শরীরে থাকলে, জন্মগত এনজাইম সমস্যাগত কারণে ইত্যাদি।
১০ দিনের পরও জন্ডিস
২-১টি বাচ্চার মায়ের বুকের দুধ থেকে একধরনের জন্ডিস হয়। এছাড়া ১০ দিনের পর জন্ডিস হলে একটু চিন্তার বিষয়।
তবে উপায়ের কারণগুলো ছাড়াও লিভারে ইনফেকশন, হরমোন ঘাটতি বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েড এবং লিভারের বাইরে পিত্ত প্রবাহ আটকে গেলেও এমনটি হতে পারে। তাই ১০ দিনের পরের জন্ডিসকে অবহেলা করা যাবে না কখনওই।
জরুরী ভিত্তিতে জন্ডিস পরীক্ষা দরকার যাদের
প্রথম দিন থেকেই জন্ডিস, যে কোন দিন খুব বেশি জন্ডিস, ১০ দিন পর যে কোন জন্ডিস, তাড়াতাড়ি বেড়ে যাচ্ছে যে জন্ডিস, পিত্ত প্রবাহ আটকে যাওয়াজনিত জন্ডিস ইত্যাদি।
মেনে নিতে হবে ফিজিওলজিকেল জন্ডিস বড়দের মাত্রায় হিসাব করলে সব নবজাতকই অল্পবিস্তর জন্ডিস আক্রান্ত হয়। বড়দের ২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হলেই তাকে জন্ডিস অ্যাখ্যা দেয়া যায়। আর নবজাতকদের পূর্ণ বয়সি জন্ম হওয়াদের ৬০% এবং অপূর্ণ বয়সে জন্ম হয়ে যাওয়াদের ৮০% স্বাভাবিক এ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। তবে পূর্ণবয়সিদের ১০ দিনের মধ্যেই তা ভাল হয়ে যায়। তবে এই জন্ডিস ৩ থেকে ৫ দিনের পর আর বাড়ে না। অল্প বাড়লে কোনো কোনো চিকিৎসক বাচ্চাদের সকালের সূর্যের আলোতে দেয়ার উপদেশ দেন। আর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে গেলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান লাইট দিয়ে ফটোথেরাপি চিকিৎসা দেয়াটাই নিয়ম।
এই জন্ডিসের কোন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জীবনে আর দেখা যায় না। তাই বলা হয় নবজাতকের এই জন্ডিসে ঘাবড়াবেন না।
কোন জন্ডিস মারাত্মক?
রক্ত কণিকা ভেঙে গিয়ে খুব বেশি মাত্রায় জন্ডিস হলে তা খুবই মারাত্মক। তাই গর্ভবতীদের নিজের এবং তার স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে আগেই তা চিকিৎসককে জানিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে যে মায়েদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ বা ‘ও’ গ্রুপের।
- হরমোন কমজনিত কারণে জন্ডিস হলে। বিশেষ করে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে, জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম নামক রোগ হয়। যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে বাচ্চার মস্তিষ্কের বৃদ্ধি না ঘটার কারণে বাচ্চা চিরকালের জন্য স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকে।
- মায়ের গর্ভালীন লিভারের প্রদাহ। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি হলে জন্মের সাথে সাথে বাচ্চাকে টিকা দিয়ে রক্ষা করতে হবে।
- পিত্ত প্রবাহ আটকে যাওয়া জন্ডিসও খুব দ্রুত অপারেশনের মাধ্যমে আরোগ্য করতে হবে। অন্যথায় লিভার নষ্ট হয়ে দ্রুতই বাচ্চাটা লিভার নষ্ট হয়ে মারা যায়।
- অন্যান্য জন্মগত/বংশগত কারণে হওয়া জন্ডিসের চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করতে হবে, যদি চিকিৎসা দেয়া সম্ভবপর হয়। যদিও এরকমের জন্ডিস খুব কম দেখা যায়।
জন্ডিসের পরীক্ষা যাদের করাতেই হবে
অপুষ্ট হয়ে জন্ম নিলে, গর্ভসময়ের চেয়েও ছোট ওজনের বাচ্চা, মাথা ছোট হলে গর্ভকালীন ইনফেকশনের লক্ষণ, ফেকাসে বাচ্চা যার রক্ত কণিকা ভেঙে যাচ্ছে/ গিয়েছে, চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ, মাথার চামড়া, থলথলে, চামড়ায় নীল/কাল দাগ, নাভীতে ঘা দেখা গেলে, লিভার, প্লিহা বড় হয়ে গেলে, থাইরয়েড হরমোন কম পাওয়া গেলে।
নবজাতকের জন্ডিস প্রতিরোধ
- মায়ের পুষ্টি, বিশ্রাম, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানী একলাম্পসিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন থেকে অপুষ্ট শিশু জন্মদান রোধ করতে হবে।
- বাচ্চাকে পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখবেন এবং হাত না ধুয়ে বাচ্চাকে কেউ ধরবেন না। অন্তত প্রথম ১ মাস।
- বাচ্চাকে শালদুধ দিন এবং শুধুমাত্র বুকের দুধ দিতে থাকুন।
- মাকে হেপাইটিস বি -এর টিকা দিন।
- মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং বাবার পজেটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত এন্টি-ডি নিন।
- মা এন্টিথাইরয়েড ওষুধ খেলে বা হাইপোথাইরয়েড হলে চিকিৎসককে আগেভাগেই তা জানাবেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে; স্বাস্থ্য
বিষয়ক তথ্য, সাধারন স্বাস্থ্য-সমস্যা ও পরামর্শ পেতে ফলো করতে পারেন-ঃ
আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানুন এবং সুস্থ থাকুন।
No comments