ডায়াবেটিস কি ? ডায়াবেটিস সর্ম্পকে আপনার যা জানা উচিৎ। (What is diabetes? What you should know about diabetes.)
শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের অভাব ঘটলে, ইনসুলিনের কাজের ক্ষমতা কমে গেলে অথবা উভয়ের মিলিত প্রভাবে রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। ইনসুলিন হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারনে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে। সামগ্রিকভাবে এই অবস্থাই ডায়াবেটিস। একজন সাধারণ মানুষের শরীরে অভুক্ত অবস্থায় ৬.১ এর নিচে এবং খাবার ২ ঘন্টা পরে ৭.৮ এর নিচে শর্করা থাকে। কোন ব্যাক্তির রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা এর বেশি যখন হয় তখন তার ডায়াবেটিসে হয়েছে ধরে নিতে হবে। মনে রাখবেন ডায়াবেটিস কোন সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ
·
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
·
পানি পিপাসা বেশি বেশি লাগবে
·
শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হবে
·
বেশি বেশি ক্ষুধা পাবে
·
স্বাভাবিকভাবে খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমতে থাকবে
·
যেকোনো ধরনের ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দেরী হবে
·
নানান রকম চর্মরোগ যেমন খোশ পাঁচড়া,
ফোঁড়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে
·
চোখে কম দেখা, দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
- টাইপ-১ ডায়াবেটিস,
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস,
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।
- টাইপ-১ ডায়াবেটিস-ঃ এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। সাধারণত ১০- ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। এই ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতেই হয়। অন্যথায় রক্তের শর্করা অতি দ্রুত বেড়ে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR3 এবং HLADR4 নামক দুটি জিন ।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস-ঃ টাইপ-২ রোগীদের শরীরে কিছু ইনসুলিন তৈরী হয় তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠ নয় অথবা রোগীরা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ত্রিশ বছরের ওপরে হয়ে থাকে। সাধারনত এই ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভর নন। এই ধরনের রোগীরা সাধারনত স্থূলকায় হন। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ। খাবারে চর্বির ধরণও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাট ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়। অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- গর্ভকালীন বা মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস-ঃ অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে কিন্তু প্রসবের পর ডায়াবেটিস আর থাকে না। এই প্রকার জটিলতাকেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস গর্ভবতী নারী, প্রসূতি কিংবা সদ্য প্রসূত শিশু সকলের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় রোগীকে প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার হতে পারে। গর্ভবতী অবস্থায় মায়ের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখার জন্য। যদি এই ইনসুলিন তৈরিতে শরীর অক্ষম হয় তাহলে ওই গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, অর্থাৎ মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়। মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিসের জন্য প্লাসেন্টাল হরমোনও দায়ী।
অন্যান্য সূনির্দিষ্ট কারণ ভিত্তিক ডায়াবেটিস-ঃ
·
জেনেটিক বা বংশগত কারনে ইনসুলিন তৈরী কম হলে।
·
জেনেটিক বা বংশগত কারনে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে।
·
নানান ধরনের সংক্রামক ব্যধির কারনে।
·
অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগের কারনে।
·
ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে।
·
অন্যান্য হরমোনের পরিমান বৃদ্ধি পেলে।
· রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণসমূহ-ঃ
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে,
“যে কোন
অজানা কারণে প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল (Beta Cell) ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
এর ফলে ইনসুলিন তৈরিতে প্যানক্রিয়াস সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভাবে ব্যাহত হয়।
ইনসুলিনের অভাবের কারণে রক্তের গ্লুকোজ আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না।
এর ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।“
যে কেউ যে কোনো বয়সে যেকোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
তবে নিম্নোক্ত শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে-ঃ
·
জেনিটিক কারণঃ যাদের বংশে বিশেষ করে বাবা-মা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
·
শারীরিক কারণঃ যাদের ওজন অনেক বেশি।
·
যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না।
·
যারা বহুদিন ধরে কর্টিসোল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন।
·
যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল।
· যাদের রক্তচাপ আছে এবং রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে।
যেসব অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রকাশ পাবার সম্ভাবনা থাকে-ঃ
১. শারীরিক স্থুলতা
২. গর্ভাবস্থা
৩. ক্ষত
৪. আঘাত
৫. অস্ত্রোপচার
৬. মানসিক বিপর্যয়
৭. রক্তনালীর অসুস্থতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের রোগ হলে।
ডায়াবেটিস কি সারানো যায়?
ডায়াবেটিস রোগ সারে না। এ রোগ সারা জীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ রোগকে খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্ভব।
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য,
সাধারন স্বাস্থ্য-সমস্যা ও সমাধান, দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার
সাধারন জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চোখ রাখতে পারেন-ঃ
Official Page (Health Sense Bangla)
আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানুন এবং সুস্থ থাকুন।
No comments